বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক মুক্তবাজার ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি, আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক অর্থায়ন করতে হয়। সুচিন্তিত ও সুদক্ষ অর্থায়ন ব্যবস্থাপনার ব্যবহারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়। নিচের বিষয়সমূহ অর্থায়ন ব্যবস্থাপনাকে অধিক অর্থবহ করে তোলে ।
ক) ব্যবসায়িক মূলধন সংকট
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থায়ন সম্পর্কিত ধারণা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ বলে আর্থিক সংকট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই সংকটের জন্য কারবার প্রতিষ্ঠান সুচারুরূপে পরিচালনা করা একটি দুরূহ কাজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল কেনা প্রয়োজন কিন্তু অর্থসংকটের জন্য সে যদি যথাসময়ে উপযুক্ত পরিমাণে কাঁচামাল কিনতে অপারগ হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অর্থায়ন-সংক্রান্ত ধারণা তাকে পরিকল্পনামাফিক যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ ও তার যথার্থ ব্যবহারে সহায়তা করে।
খ) অনগ্রসর ব্যাংক ব্যবস্থা
উপরন্তু উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সুসংগঠিত নয় বলে ঋণের জন্য আবেদন করলেও কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে ঋণ পাওয়া যায় না। অনেক সময় ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়, তার অপ্রতুলতার কারণে ব্যাংক ঋণ উপযুক্ত সময়ে ও যথার্থ পরিমাণে পাওয়া যায় না। ফলে ব্যবসায়ীদের এ অর্থসংকট হতে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য খুবই পরিকল্পিতভাবে অর্থের সংস্থান করতে হয় এবং সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অর্থের লাভজনক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ীদের এ ধরনের সমস্যা পূর্বানুমান করতে সাহায্য করে এবং যেসব পদ্ধতিতে তা মোকাবিলা করা যায় তার ধারণা দেয়।
গ) স্বল্পশিক্ষিত উদ্যোক্তা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা স্বল্পশিক্ষিত বলে তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। এতে করে অনেক লাভজনক প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে আর্থিক সংকটে সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না এবং অবশেষে লাভের বদলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অথচ এই ক্ষতির কারণ শুধু আর্থিক অব্যবস্থাপনা। অর্থায়ন ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জ্ঞান থাকলে সহজেই একজন ব্যবসায়ী পরিকল্পনামাফিক স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ সংস্থান করে তার সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করতে পারে।
ঘ) উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ ও জাতীয় আয়
একটি সফল বিনিয়োগ জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। অর্থায়নবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োগে একজন ব্যবসায়ী বিনিয়োগের বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভবিষ্যৎ আয়-ব্যয়ের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পটি বেছে নিতে পারে। এই ধরনের লাভজনক বিনিয়োগ কারবারটির জন্য যেমন অর্থবহ, তেমনি সারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আরও দেখুন...